তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কত জানতে চাচ্ছেন? বর্তমানে তিন চাকার অটো গাড়ির দাম ১ লাখ থেকে শুরু করে ২ লাখের মধ্যে হয়ে থাকে নতুন কন্ডিশনে এবং ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখের মধ্যে হয়ে থাকে পুরাতন কন্ডিশনে। যারা তিন চাকার অটো গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন তাদের রয়েছে অনেক বেশি অপশন অটো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে তিন চাকার অটো গাড়ির অন্যতম সুবিধা এটি চালানো সহজ এবং কম খরচে কেনা যায়। তাছাড়া প্রতিবার সম্পূর্ণ চার্জে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া যায়। একবার পূর্ণ চার্জ করতে খরচ পড়ে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা সিএনজির তুলনায় অনেক কম। প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা, যা সিএনজিতে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি হয়।
তিন চাকার অটো গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর মজবুত বডি। সম্পূর্ণ মেটাল বডি হওয়ায় এটি সহজে ভাঙে না বা জং ধরে না। একবার কেনার পর দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব। এর সাথে দেওয়া হয়েছে ল্যামিনেটেড গ্লাস, যা কুয়াশা ও বৃষ্টির মধ্যে ভেতর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়া, এই গাড়িতে রয়েছে এলইডি লাইট, যা সাধারণত প্রাইভেট কার গুলোতে ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন ধরণ-ধারণ ও মডেলের উপর নির্ভর করে তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কম বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া স্থানভেদেও দামের পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। এই আর্টিকেল কোন মডেলের তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কত সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।
সূচীপত্র
তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কত ২০২৪
বাংলাদেশে সিএনজি গাড়ির দাম অত্যন্ত বেশি। ঢাকায় একটি সিএনজি কিনতে প্রায় ২০ লাখ টাকা লাগে, আর গ্রামের সিএনজি গাড়ির দাম পড়ে ৫-৬ লাখ টাকা।
আরও দেখুন- রাইস কুকারের দাম কত ২০২৪ (আজকের দাম)
কিন্তু তিন চাকার অটো গাড়ির দাম সে তুলনায় অনেক কম খরচে পাওয়া যায়। একটি তিন চাকার অটো গাড়ির দাম ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। বর্তমানে তিন চাকার অটো গাড়ির দাম বিভিন্ন মডেলের উপর নির্ভর করে। মূলত তিন ধরনের অটো গাড়ি পাওয়া যায়:
- সাধারণ অটো গাড়ি
- ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি
- ইলেকট্রিক অটো গাড়ি
নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের তিন চাকার অটো গাড়ি দাম কত তার তালিকা উল্লেখ করা হলো।
ধরণ | দাম (টাকা) |
ছোট মিশুক অটো | ১,২০,০০০ – ১,৫০,০০০ |
বড় মিশুক অটো | ২,০০,০০০ |
ব্যাটারি চালিত অটো | ১,০০,০০০ – ১,৫০,০০০ |
পুরাতন মিশুক অটো | ৫০,০০০ – ৮০,০০০ |
নতুন ইজি বাইক | ১,৫০,০০০ – ২,০০,০০০ |
পুরাতন ইজি বাইক | ৫০,০০০ – ৮০,০০০ |
টমটম গাড়ি | ১,২০,০০০ – ৩,০০,০০০ |
নতুন ইলেকট্রিক অটো | ৩,০০,০০০ – ৩,৫০,০০০ |
পুরাতন ব্যাটারি চালিত | ৪০,০০০ – ৫০,০০০ |
তিন চাকার পুরাতন অটো গাড়ির দাম ২০২৪
পুরাতন অটো গাড়ির বাজার দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই পুরাতন অটো গাড়ি কিনে মেরামত করে পুনরায় ব্যবহার করছেন। তিন চাকার পুরাতন অটো গাড়ির দাম বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন: মডেল, অবস্থান, এবং গাড়ির কন্ডিশন। নিম্মে তিন চাকার পুরাতন অটো গাড়ির দামের কিছুটা ধারণা দেয়া হলো।
গাড়ির প্রকার | দাম (টাকা) |
পুরাতন মিশুক অটো | ৫০,০০০ – ১,১০,০০০ |
পুরাতন ইজি বাইক | ৬০,০০০ – ১,০০,০০০ |
পুরাতন ব্যাটারি চালিত অটো | ৪০,০০০ – ৬০,০০০ |
পুরাতন টমটম গাড়ি | ৭০,০০০ – ৯০,০০০ |
তিন চাকার ইজি অটো গাড়ির দাম কত?
বাংলাদেশের গ্রামে ও শহরে তিন চাকার ইজি অটো গাড়ি গুলোর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। ইজি অটো গাড়ি দিয়ে মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি যাতায়াতের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন তিন চাকার ইজি অটো গাড়ির দাম ১,১০,০০০ টাকা থেকে ১,৬০,০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং পুরাতন গাড়ি ৭০,০০০ টাকা থেকে ৯০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
আরও দেখুন- ব্লেন্ডার মেশিন দাম বাংলাদেশ ২০২৪
এই পর্যায়ে কিছু মডেল ভিত্তিক তিন চাকার ইজি অটো গাড়ির দাম ও অন্যান্য স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হলো।
বৈশিষ্ট্য | সুপার ইজি | প্যারাডাইস ইজি | মডার্ন ইজি | নতুন মডেল ইজি |
ব্যাটারি | ৫টি ব্যাটারি | ৪টি ব্যাটারি | ৫টি ব্যাটারি | ৪টি ব্যাটারি |
মোটর শক্তি | ১২০০ ওয়াট | ১০০০ ওয়াট | ১২০০ ওয়াট | ১২০০ ওয়াট |
ধারণক্ষমতা | ৫-৮ জন | ৬-৯ জন | ৫-৮ জন | ৯ জন |
হাইলাইটেড বৈশিষ্ট্য | ১) ডিজিটাল মিটার, ২) সাউন্ড সিস্টেম,৩) ফ্যান | ১) রুম লাইট, ২) টুল বক্স | ১) ডিজিটাল মিটার,২) পিকআপ ব্যবস্থা | ১) রিভার্স গিয়ার, ২) রুম লাইট |
দাম (নতুন) | ১,১০,০০০ টাকা | ১,৩০,০০০ টাকা | ১,৬০,০০০ টাকা | ১,৪০,০০০ টাকা |
দাম (পুরাতন) | ৭০,০০০ – ৮০,০০০ টাকা | ৮০,০০০ – ৯০,০০০ টাকা | ৭৫,০০০ – ৮৫,০০০ টাকা | ৭০,০০০ – ৯০,০০০ টাকা |
তিন চাকার মিশুক গাড়ির দাম কত 2024?
মিশুক গাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় যানবাহন হিসেবে বিবেচিত। এটি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে – ছোট এবং বড় মিশুক। মিশুক গাড়ি দামের তারতম্য হয়ে থাকে আকার, বৈশিষ্ট্য, এবং স্থানভেদে।
নতুন মিশুক গাড়ির দাম কত
#১. ছোট মিশুক অটো রিক্সা: ছোট তিন চাকার মিশুক গাড়ি নতুন কিনতে ন্যূনতম ১,২০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকার লাগবে। ছোট মিশুক সাধারণত গ্রামের রাস্তায় বেশি ব্যবহার করা হয় এবং শহরের ছোট যাত্রী পরিবহনের জন্যও উপযুক্ত।
#২. বড় মিশুক অটো রিক্সা: তিন চাকার বড় মিশুক গাড়ি জন্য নতুন মডেলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বড় গুলোতে তুলনামূলক বেশি যাত্রী পরিবহন করা যায়।
পুরাতন মিশুক গাড়ির দাম কত
যদি আপনি একটি পুরাতন তিন চাকার মিশুক গাড়ি কিনতে চান, তবে এর মূল্য অনেকটাই কমে আসে। ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের পুরাতন অটো বাজারে পাওয়া যায়। পুরাতন তিন চাকার মিশুক গাড়ির দাম এর অবস্থা, ব্যবহারের সময়কাল এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে।
বিভিন্ন মডেলের মিশুক গাড়ির দাম ২০২৪
মিশুক গাড়ি মডেল আকারে পাওয়া যায় সেগুলোর স্পেসিফিক তথ্যের তালিকা দেয়া হলো:
মডেল | দাম (টাকা) | ফিচারস |
স্যান্ডি মিশুক হাফ ছাদ | ১,৪৩,০০০ (ব্যাটারি সহ) | – ৩৬ ইঞ্চি চেসিস- ১০০০ ওয়াট ব্রাশলেস মোটর- ৪৮ ভোল্ট কপার চার্জার- ডিজিটাল মিটার (স্পিড ও অন্যান্য তথ্য)- সাইড পর্দা, রুম লাইট, মিউজিক বক্স- ৪ জন প্যাসেঞ্জার ক্যাপাসিটি- ৬০-৭০ কিমি চলাচল, ১২০ কেজি পণ্য বহন |
মিশুক হাফ ছাদ (পাউডার ব্যাটারি) | ১,০৭,০০০ (পাউডার ব্যাটারি সহ) | – উন্নত হেডলাইট ডিজাইন- ১০০% কাস্টমাইজড ডিজাইন- পেছনে রিক্সার মতো হুড- সিকিউরিটি লক সিস্টেম- রিমোট কন্ট্রোল লক সুবিধা- লিড এসিড বা পাউডার ব্যাটারি বিকল্প |
মিশুক ৪১ ইঞ্চি মডেল | ১,৫০,০০০ (লিড এসিড ব্যাটারি সহ) | – ৪১ ইঞ্চি চওড়া চেসিস- উন্নত ডিজিটাল মিটার ও সাসপেনশন- রুম লাইট, মিউজিক বক্স, স্পেয়ার চাকা- সিকিউরিটি লক ও রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা- ১০০% চাইনিজ ইলেকট্রনিক্স |
তিন চাকার ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ির দাম ২০২৪
ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানি খরচ কম হওয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এগুলো সারারাত ব্যাটারি চার্জ করে সারাদিন চালানো যায়। ২০২৪ সালে, ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ির দাম আনুমানিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিশেষভাবে তৈরি কিছু কোম্পানি (যেমন: “শ্রীমঙ্গল অটো”, “ইকো অটো” এবং “ঢাকা অটো” ইত্যাদি) স্থানীয় বাজারে তাদের ব্যাটারি চালিত অটো গাড়ি বিক্রি করে থাকে।
আরও দেখুন- নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
তিন চাকার ইলেকট্রিক অটো গাড়ির দাম ২০২৪
ইলেকট্রিক অটো গাড়ি গুলো ইকো-ফ্রেন্ডলি, অর্থাৎ এগুলো চালাতে পেট্রোল বা ডিজেলের প্রয়োজন হয় না, যা পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া, এসব গাড়ির ব্যাটারি সহজেই পরিবর্তন করা যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চালানো যায়।
ইলেকট্রিক অটো গাড়ি চালিয়ে ইনকামও বেশ ভালো করা যায়। তিন চাকার ইলেকট্রিক অটো গাড়ির দাম মূলত ব্যাটারির মান, চলাচলের সময় ও বিভিন্ন ধারণ ক্ষমতা ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি মডেলের বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনের তালিকা দেয়া হলো:
বৈশিষ্ট্য | মডার্ন টাচ মডেল | প্রজাপতি মডেল | মিনি বোরাক মডেল |
মোটর ক্ষমতা | ১২০০ ওয়াট | ১২০০ ওয়াট | ১২০০ ওয়াট |
ব্যাটারি | ৫টি ব্যাটারি | ৪টি ব্যাটারি | মিশুক ব্যাটারি |
আসন সংখ্যা | উল্লেখ নেই | ৬ থেকে ৯ জন | ৯ জন পর্যন্ত |
গিয়ার সিস্টেম | ৩ গিয়ারের পিকআপ সিস্টেম | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
মূল্য (টাকা) | ১,৬৫,০০০ | ১,৪৬,০০০ | ১,৪৬,০০০ |
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য | ডিজিটাল মিটার, সাউন্ড সিস্টেম, রুম লাইট, ফ্যান, লুকিং গ্লাস, সাউন্ড বক্স | ডিজিটাল মিটার, রুম লাইট, পিকআপ ব্যবস্থা | ডিজিটাল মিটার, রুম লাইট, ফ্যান, টুল বক্স, পাপুস |
চূড়ান্ত মন্তব্য
আর্টিকেলটিতে নতুন পুরাতন, সকল ধরনের তিন চাকার অটো গাড়ির দাম কত সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে বেকার বসে না থাকে অটো গাড়ি কিনে চালানো একটি লাভজনক উদ্যোগ। বিবেচনা করলে তিন চাকার অটো গাড়ির দাম অনেকটাই হাতের নাগালে, তবে বাজেট কম থাকলে পুরাতন অটো গাড়ির ব্যাপার বিবেচনা করা যায়।